০৮:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে আদালত।

প্লট দুর্নীতি: হাসিনা, রেহানা, ববির সঙ্গে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে গ্রেপ্তারেও পরোয়ানা

শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা

‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ ঢাকার পূর্বাচলে ৩০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

এ তিন মামলায় দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব রোববার পরোয়ানা জারির এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে আদালত।”

‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের’ মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে শেখ রেহানা, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী এবং রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে করা তিন মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল।

এর আগে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় গত ১০ এপ্রিল শেখ হাসিনা, পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে একই আদালত।

রেহানার মেয়ে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে আসামি করা হয়েছে তার বোন রূপন্তীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায়। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই অভিযোগে তদন্ত চলছে, তার মধ্যে একটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হল।

শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরে কয়েক ধাপে ছয়টি মামলা করা হয়, যার মধ্যে রেহানার প্লট নিয়ে মামলাটি করা হয় চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি।

দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের’ মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা প্লট নেওয়ার অভিযোগে এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে আসামি করেন।

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরো দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

তিনি আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন ১৩ জানুয়ারি। পূর্বাচলে রূপন্তীর নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে এ মামলায় টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরো দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া ।

রেহানা, রূপন্তীর সঙ্গে একই দিনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও প্লট বরাদ্দে অনিয়মের মামলা হয়।

দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করেন।

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরো দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন রাশেদুল হাসান।

এই ছয় মামলার সবগুলোতেই শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তার এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধান আসামি করে দায়ের করা মামলায় দেওয়া অভিযোগ গ্রহণের বিষয়ে ১৫ এপ্রিল শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

দুদক মামলায় বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দপ্তরসহ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে রেহানার নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেন।

রাজউক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের নথি পর্যালোচনা করে দুদক দেখেছে, রেহানা তার আয়কর রিটার্নে ঢাকার সেগুনবাগিচায় একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। কোনাবাড়ীতে ১৬০ শতাংশ কৃষি জমি থাকার কথাও আয়কর রিটার্নে দেখিয়েছেন তিনি।

আর মা রেহানার কাছ থেকে গুলশানের তিনটি ফ্ল্যাট দানসূত্রে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তিনি ও তার বোন রূপন্তীর নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া রেহানার বড় বোন শেখ হাসিনা, ভাগ্নি পুতুল ও ভাগ্নে জয়ের নামেও পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট রয়েছে। অথচ এসব তথ্য গোপন করে রেহানা পূর্বাচলে প্লট নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।

দুদক বলছে, রাজউক এলাকায় রেহানা ও তার পরিবারের ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত ‘আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন’ করেছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ তার মা রেহানা, বোন রূপন্তী ও ভাই বোনের প্লট নিশ্চিতে খালা শেখ হাসিনার ওপর ‘চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার’ করেন। আর শেখ হাসিনা তার বোনের প্লট নিশ্চিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজউকের চেয়ারম্যানকে ‘নির্দেশনা’ দেন। প্লট বরাদ্দে বিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথাও এজাহারে বলেছে দুদক।

ব্রিটিশ এমপি যেভাবে আসামি

যে ছয়টি মামলা হয়েছে তাতে একমাত্র টিউলিপই প্লট না নিয়েও আসামি হয়েছেন।

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও টিউলিপ সিদ্দিক
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও টিউলিপ সিদ্দিক

রূপন্তীর বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়েছে, রূপন্তী তার আয়কর রিটার্নে বড় বোন টিউলিপের কাছ থেকে ঢাকার গুলশানে ফ্ল্যাট পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার মা-ভাইয়ের পূর্বাচলে প্লট রয়েছে। এছাড়া তার খালা শেখ হাসিনা এবং সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েরও প্লট রয়েছে পূর্বাচলে। এসব তথ্য ‘গোপন’ করে রূপন্তী প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, যা পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতির লঙ্ঘন।

এক্ষেত্রে তার বোন টিউলিপ খালা শেখ হাসিনাকে ‘চাপ’ প্রয়োগ করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

গত ১০ মার্চ দুদকের তরফ থেকে বলা হয়, টিউলিপ তার বোনকে গুলশানের ওই ফ্ল্যাট হস্তান্তরে যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হয়েছে।

টিউলিপ ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা রূপন্তীকে ‘হেবা’ করে দেন। হেবা দলিলটি হয় ২০১৫ সালের ৯ জুন। সেখানে দাতা ছিলেন রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ সিদ্দিক); গ্রহীতা ছিলেন আজমিনা সিদ্দিক।

দলিলে বলা হয়, ‘বোনের প্রতি ভালবাসা ও স্নেহ’থেকে সম্পত্তি হেবা দিতে চান দাতা।

দলিল অনুযায়ী, ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কেনা গুলশানের ফ্ল্যাটটি আজমিনা সিদ্দিককে দেওয়া হয়। দলিলে ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ মালিকানা, স্বত্ব, অধিকার এবং একটি পার্কিং স্পেস হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে।

ওই ফ্ল্যাটের অবস্থান, গুলশান রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর প্লটে। এটি ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ-পূর্ব পাশের একটি ফ্ল্যাট। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দলিল সম্পন্ন হয়।

সেই হেবা দলিলে সই রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের। প্লট মামলার অভিযোগ তদন্তে দুদক ওই আইনজীবীরও সাক্ষ্য নেয়।

দুদককে তিনি বলেছেন, তার নোটারির নামে টিউলিপের ফ্ল্যাট হস্তান্তরের যে হেবা দলিলটি দেখানো হয়েছে, সেখানে সিলটি তার মতই, কিন্তু সইটি ‘তার নয়’।

হেবা দলিলের এক সাক্ষীকে চিনলেও দাতাসহ অন্যদের চেনেননা বলে দুদকের কাছে দাবি করেছেন ওই আইনজীবী।

এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে সিরাজুল ইসলাম সে সময় বলেছিলেন, “ওই হেবা দলিলের নোটারি আমি করিনি। উনাদের কখনো ওই নামে চিনিও না। এমনিতে চিনি ওই নামে একজন ব্রিটিশ মন্ত্রী ছিলেন কিছুদিন আগে; ওতটুকুই।

“কিন্তু উনাদের আমি চিনি না। আর বিষয় হল, আমি আমার চেম্বারের বাইরে সাধারণত কোনো নোটারি করি না।”

গুলশানের ওই প্লটের তথ্য নিয়ে টিউলিপ ব্রিটিশ পার্লামেন্টকেও বিভ্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে।

অবশ্য টিউলিপের ব্রিটিশ আইনজীবী পল থুয়েট বলেছেন, গুলশানের ওই প্লট নিয়ে যথাযথভাবেই হেবা সম্পন্ন করা হয়েছিল। টিউলিপ সিদ্দিক পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন—এমন দাবি ‘অসত্য ও অযৌক্তিক’।

জগতি চিনিকলের অপমৃত্যু — আমাদের শিকড়ে কোপ:

রাজশাহীতে হাতকরা পরা অবস্থায় আসামী পলায়ন

কুষ্টিয়ায় বিএনপি নেতার বাসায় গুলি

চুয়াডাঙ্গায় ইয়াবাসহ তিন মাদক কারবারি আটক

নাটোরে ভুট্টা ক্ষেত থেকে শিশু জুঁইয়ের মরদেহ উদ্ধার, তদন্তে পুলিশ

শার্শায় ধানক্ষেত থেকে দুটি পাইপগান উদ্ধার

বৈশাখের সন্ধ্যায় মিনিবাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে শিশু নিহত, বাসে আগুন

নিজেকে ছাত্রলীগ দাবির ৪ বছর পর হয়ে গেলেন ছাত্রদলের আহ্বায়ক

সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ওয়ার্ড সুবিধার দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

প্লট দুর্নীতি: হাসিনা, রেহানা, ববির সঙ্গে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে গ্রেপ্তারেও পরোয়ানা

মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনস্রোত

এশিয়ার ৩ দেশ সফর করবেন শি জিনপিং

নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ, ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত ৩

চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে হাসিনার দোসররা: ফারুকী

সিলেটে ‘গাড়ি পার্কিং’ নিয়ে সংঘর্ষ, ৩১ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

কুষ্টিয়ার আমলায় জুমার নামাজ শেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে দোয়া ও প্রতিবাদ মিছিল

সম্পাদকীয়

চলতি বছর বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে এনডিবি

ইহুদিবাদ এবং গাজার ভবিষ্যৎ: সংঘাতের বৃত্ত থেকে মুক্তির খোঁজে

সারা দেশে দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৪৯ জন গ্রেপ্তার

রাজশাহী নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির রেফেল ড্র অনুষ্ঠিত

আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে আদালত।

প্লট দুর্নীতি: হাসিনা, রেহানা, ববির সঙ্গে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে গ্রেপ্তারেও পরোয়ানা

প্রকাশের সময় : ০৮:৪৬:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ ঢাকার পূর্বাচলে ৩০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

এ তিন মামলায় দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব রোববার পরোয়ানা জারির এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে আদালত।”

‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের’ মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে শেখ রেহানা, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী এবং রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে করা তিন মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল।

এর আগে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় গত ১০ এপ্রিল শেখ হাসিনা, পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে একই আদালত।

রেহানার মেয়ে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে আসামি করা হয়েছে তার বোন রূপন্তীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায়। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই অভিযোগে তদন্ত চলছে, তার মধ্যে একটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হল।

শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরে কয়েক ধাপে ছয়টি মামলা করা হয়, যার মধ্যে রেহানার প্লট নিয়ে মামলাটি করা হয় চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি।

দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের’ মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা প্লট নেওয়ার অভিযোগে এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে আসামি করেন।

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরো দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

তিনি আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন ১৩ জানুয়ারি। পূর্বাচলে রূপন্তীর নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে এ মামলায় টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরো দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া ।

রেহানা, রূপন্তীর সঙ্গে একই দিনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও প্লট বরাদ্দে অনিয়মের মামলা হয়।

দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করেন।

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরো দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন রাশেদুল হাসান।

এই ছয় মামলার সবগুলোতেই শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তার এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধান আসামি করে দায়ের করা মামলায় দেওয়া অভিযোগ গ্রহণের বিষয়ে ১৫ এপ্রিল শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

দুদক মামলায় বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দপ্তরসহ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে রেহানার নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেন।

রাজউক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের নথি পর্যালোচনা করে দুদক দেখেছে, রেহানা তার আয়কর রিটার্নে ঢাকার সেগুনবাগিচায় একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। কোনাবাড়ীতে ১৬০ শতাংশ কৃষি জমি থাকার কথাও আয়কর রিটার্নে দেখিয়েছেন তিনি।

আর মা রেহানার কাছ থেকে গুলশানের তিনটি ফ্ল্যাট দানসূত্রে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তিনি ও তার বোন রূপন্তীর নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া রেহানার বড় বোন শেখ হাসিনা, ভাগ্নি পুতুল ও ভাগ্নে জয়ের নামেও পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট রয়েছে। অথচ এসব তথ্য গোপন করে রেহানা পূর্বাচলে প্লট নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।

দুদক বলছে, রাজউক এলাকায় রেহানা ও তার পরিবারের ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত ‘আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন’ করেছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ তার মা রেহানা, বোন রূপন্তী ও ভাই বোনের প্লট নিশ্চিতে খালা শেখ হাসিনার ওপর ‘চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার’ করেন। আর শেখ হাসিনা তার বোনের প্লট নিশ্চিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজউকের চেয়ারম্যানকে ‘নির্দেশনা’ দেন। প্লট বরাদ্দে বিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথাও এজাহারে বলেছে দুদক।

ব্রিটিশ এমপি যেভাবে আসামি

যে ছয়টি মামলা হয়েছে তাতে একমাত্র টিউলিপই প্লট না নিয়েও আসামি হয়েছেন।

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও টিউলিপ সিদ্দিক
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও টিউলিপ সিদ্দিক

রূপন্তীর বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়েছে, রূপন্তী তার আয়কর রিটার্নে বড় বোন টিউলিপের কাছ থেকে ঢাকার গুলশানে ফ্ল্যাট পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার মা-ভাইয়ের পূর্বাচলে প্লট রয়েছে। এছাড়া তার খালা শেখ হাসিনা এবং সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েরও প্লট রয়েছে পূর্বাচলে। এসব তথ্য ‘গোপন’ করে রূপন্তী প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, যা পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতির লঙ্ঘন।

এক্ষেত্রে তার বোন টিউলিপ খালা শেখ হাসিনাকে ‘চাপ’ প্রয়োগ করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

গত ১০ মার্চ দুদকের তরফ থেকে বলা হয়, টিউলিপ তার বোনকে গুলশানের ওই ফ্ল্যাট হস্তান্তরে যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হয়েছে।

টিউলিপ ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা রূপন্তীকে ‘হেবা’ করে দেন। হেবা দলিলটি হয় ২০১৫ সালের ৯ জুন। সেখানে দাতা ছিলেন রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ সিদ্দিক); গ্রহীতা ছিলেন আজমিনা সিদ্দিক।

দলিলে বলা হয়, ‘বোনের প্রতি ভালবাসা ও স্নেহ’থেকে সম্পত্তি হেবা দিতে চান দাতা।

দলিল অনুযায়ী, ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কেনা গুলশানের ফ্ল্যাটটি আজমিনা সিদ্দিককে দেওয়া হয়। দলিলে ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ মালিকানা, স্বত্ব, অধিকার এবং একটি পার্কিং স্পেস হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে।

ওই ফ্ল্যাটের অবস্থান, গুলশান রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর প্লটে। এটি ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ-পূর্ব পাশের একটি ফ্ল্যাট। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দলিল সম্পন্ন হয়।

সেই হেবা দলিলে সই রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের। প্লট মামলার অভিযোগ তদন্তে দুদক ওই আইনজীবীরও সাক্ষ্য নেয়।

দুদককে তিনি বলেছেন, তার নোটারির নামে টিউলিপের ফ্ল্যাট হস্তান্তরের যে হেবা দলিলটি দেখানো হয়েছে, সেখানে সিলটি তার মতই, কিন্তু সইটি ‘তার নয়’।

হেবা দলিলের এক সাক্ষীকে চিনলেও দাতাসহ অন্যদের চেনেননা বলে দুদকের কাছে দাবি করেছেন ওই আইনজীবী।

এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে সিরাজুল ইসলাম সে সময় বলেছিলেন, “ওই হেবা দলিলের নোটারি আমি করিনি। উনাদের কখনো ওই নামে চিনিও না। এমনিতে চিনি ওই নামে একজন ব্রিটিশ মন্ত্রী ছিলেন কিছুদিন আগে; ওতটুকুই।

“কিন্তু উনাদের আমি চিনি না। আর বিষয় হল, আমি আমার চেম্বারের বাইরে সাধারণত কোনো নোটারি করি না।”

গুলশানের ওই প্লটের তথ্য নিয়ে টিউলিপ ব্রিটিশ পার্লামেন্টকেও বিভ্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে।

অবশ্য টিউলিপের ব্রিটিশ আইনজীবী পল থুয়েট বলেছেন, গুলশানের ওই প্লট নিয়ে যথাযথভাবেই হেবা সম্পন্ন করা হয়েছিল। টিউলিপ সিদ্দিক পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন—এমন দাবি ‘অসত্য ও অযৌক্তিক’।