
বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবি) গুলশানে ২১ তলা একটি বাণিজ্যিক ভবনের ১৫টি ফ্লোর কিনে নিচ্ছে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। ফ্লোরপ্রতি খরচ হবে ৩০ কোটি টাকা। তবে বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকটি এই ভবনের ফ্লোরগুলো কিনছে বাজারদরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি দামে, যা উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকদের মধ্যে।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের ১৩৮ নম্বর সড়কে অবস্থিত একটি বাণিজ্যিক ভবনের নিচতলা থেকে ১৪ তলা পর্যন্ত মোট ১৫টি ফ্লোর কেনা হবে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকটি তার প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর করবে।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গুলশানে আবাসিক ভবনের বর্তমান বাজারদর প্রতি বর্গফুট ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে হলেও, বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের দাম দেড়গুণ বেশি হওয়ার কথা কিন্তু এমটিবির ক্রয়মূল্য আরও কয়েক গুণ বেশি।
এই দামের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে প্রতিটি ফ্লোরের গড় আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গফুট। যদি ফ্লোরের আয়তন কম হয়, তবে প্রতি বর্গফুট মূল্য আরও বাড়ে।
বিনিয়োগ বিশ্লেষকরা বলছেন, “পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি ব্যাংকের এমন বড় অঙ্কের বিনিয়োগে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি দামে কেনার পেছনে যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা না করা হলে এটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।”
তারা আরও বলছেন, ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধান কার্যালয় কেনা স্বাভাবিক বিষয় হলেও, শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিটি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত এবং স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন।
ব্যাংকটি জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিতে হবে। অর্থাৎ এখনো চূড়ান্তভাবে চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।
এমটিবি ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে মোট সম্পদের পরিমাণ, লাভ-লোকসান ও মূলধন কাঠামো ভালোভাবে বজায় রেখেছে। তবে এমন বড় বিনিয়োগ তার নগদ প্রবাহ ও ভবিষ্যৎ লভ্যাংশ বিতরণ সক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
একটি ব্যাংক বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে বাণিজ্যিক সম্পত্তি কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে—এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা রক্ষা করতে হলে ব্যাংকটির উচিত স্বচ্ছ ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন প্রকাশ করা। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোরও উচিত বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা।
এবিষয়ে বার্তা২৪ এর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।