দীর্ঘ ১৫ বছর পর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।
মঙ্গলবার দুপুর তার ঢাকায় পৌঁছার তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের প্রধান ইশরাত জাহান।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ ২০১০ সালে এমন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন। আর পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ নেতৃত্ব দেবেন পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের।
আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, আঞ্চলিক রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্তিমিত ছিল ঢাকার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও গভীর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
অতীতের ‘টানাপোড়েন’ পেরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ চাওয়ার কথা ইতোমধ্যে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকও হয়েছে। সেখানে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন তারা।
ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনায় একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা এবং আটকেপড়া সম্পত্তি ফেরত ও ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন সব সময় সামনে আসে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন বাদ রেখে সম্পর্কোন্নয়নের কোনো বার্তা পাকিস্তানকে না দেওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ইউনূস-শাহবাজ বৈঠকের পর দেশে ফিরে তিনি বলেছেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া হবে।
ওই বৈঠকে একাত্তরে ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি উঠেছে কি না, এমন প্রশ্নে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সৌজন্য সাক্ষাতে কঠিন বিষয়গুলো তোলা হয় না। যখন আলোচনার টেবিলে বসব, তখন এই বিষয় আলোচনা তুলব।”
একাত্তরকে বাদ রেখে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা ও এগিয়ে নেওয়া হবে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “না। আমরা মোটেই তাদেরকে এ প্রসঙ্গে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করিনি যে, একাত্তরকে বাদ দিয়ে আমরা ভালো সম্পর্ক রাখব। ভালো সম্পর্ক নিশ্চয় করার চেষ্টা করব, একাত্তরও থাকবে।”
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জোট সার্ককে সক্রিয় করার কথাও দায়িত্বগ্রহণের পর বলে আসছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ। এক্ষেত্রে ভারতের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এর জবাবে, সার্ক নিষ্ক্রিয় হওয়ার জন্য পাকিস্তানের কর্মকাণ্ডকে দায় দিয়ে এক্ষেত্রে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। উল্টো বাংলাদেশকে বলেছে, ঢাকা যেন ‘সন্ত্রাসবাদকে স্বাভাবিক বিষয়’ করে না ফেলে।
এফওসি শেষে পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ ফিরে যাওয়ার পর ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসার কথা রয়েছে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের।
পাকিস্তানের উচ্চ পর্যায়ের দুই সফরের বিষয়ে এক প্রশ্নে সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা হবে এই সফরে।