০৩:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আমাদের করণীয়।

  • সম্পাদকীয়
  • প্রকাশের সময় : ০৪:১৪:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • 17

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে এক জটিল ও সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। নানা পর্যায়ে সংস্কার ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বৈষম্য, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, মানহীন পাঠদান, শিক্ষক সংকট ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণের অভাব — সব মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এক ধরনের ভঙ্গুর কাঠামোতে পরিণত হয়েছে।

শিক্ষায় বৈষম্য ও সুযোগের অভাব

শহর ও গ্রামের শিক্ষার মানে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। উন্নতমানের স্কুল, অভিজ্ঞ শিক্ষক ও আধুনিক প্রযুক্তি সাধারণত শহরকেন্দ্রিক, যেখানে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে এখনও বিদ্যুৎ, বসার সঠিক ব্যবস্থা কিংবা পাঠ্যপুস্তকও পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও বেসরকারি ও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মানগত ফারাক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করছে।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মান

শিক্ষকেরা জাতি গঠনের কারিগর হলেও, আমাদের দেশে এই পেশায় যথাযথ সম্মান ও প্রশিক্ষণ প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে। নিয়োগে দুর্নীতি, নিয়মিত প্রশিক্ষণের অভাব ও অতিরিক্ত প্রশাসনিক চাপ অনেক শিক্ষককে নিরুৎসাহিত করে তোলে। ফলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পাঠ্যক্রম ও বাস্তবতা

বর্তমান পাঠ্যক্রম অনেকাংশেই মুখস্থনির্ভর, চিন্তাশীলতা ও সৃজনশীলতার চর্চা এখানে অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীরা নম্বর পাওয়ার দৌড়ে যুক্ত থাকলেও তারা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়ে। প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের এই যুগে শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করা — যা এখনো অনেকটাই অনুপস্থিত।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতি

শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বত্র রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির ছাপ স্পষ্ট। নিয়োগ, বদলি, পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রভাব পড়ে থাকে। এসব কারণে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও উন্নয়নমুখী পরিবেশ গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।

আমাদের করণীয়

১. শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি তা সঠিকভাবে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে।
২. গ্রামীণ শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. শিক্ষক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ও নিয়মিত করতে হবে।
৪. শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং ই-লার্নিংকে উৎসাহিত করতে হবে।
৫. শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬. একটি যুগোপযোগী ও দক্ষতাভিত্তিক পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।

উপসংহার

একটি জাতির উন্নয়ন নির্ভর করে তার শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। ভঙ্গুর কাঠামোকে সুসংহত করতে হলে একযোগে সরকার, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আজকের বিনিয়োগই হবে আগামীর ভিত্তি — এই উপলব্ধি থেকেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক, গ্রহণযোগ্য ও মানবিক করে তুলতে হবে।

চুয়াডাঙ্গায় ইয়াবাসহ তিন মাদক কারবারি আটক

নাটোরে ভুট্টা ক্ষেত থেকে শিশু জুঁইয়ের মরদেহ উদ্ধার, তদন্তে পুলিশ

শার্শায় ধানক্ষেত থেকে দুটি পাইপগান উদ্ধার

বৈশাখের সন্ধ্যায় মিনিবাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে শিশু নিহত, বাসে আগুন

নিজেকে ছাত্রলীগ দাবির ৪ বছর পর হয়ে গেলেন ছাত্রদলের আহ্বায়ক

সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ওয়ার্ড সুবিধার দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

প্লট দুর্নীতি: হাসিনা, রেহানা, ববির সঙ্গে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে গ্রেপ্তারেও পরোয়ানা

মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনস্রোত

এশিয়ার ৩ দেশ সফর করবেন শি জিনপিং

নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ, ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত ৩

চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে হাসিনার দোসররা: ফারুকী

সিলেটে ‘গাড়ি পার্কিং’ নিয়ে সংঘর্ষ, ৩১ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

কুষ্টিয়ার আমলায় জুমার নামাজ শেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে দোয়া ও প্রতিবাদ মিছিল

সম্পাদকীয়

চলতি বছর বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে এনডিবি

ইহুদিবাদ এবং গাজার ভবিষ্যৎ: সংঘাতের বৃত্ত থেকে মুক্তির খোঁজে

সারা দেশে দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৪৯ জন গ্রেপ্তার

চেকপোস্ট ব্যারাক থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আমাদের করণীয়।

প্রকাশের সময় : ০৪:১৪:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে এক জটিল ও সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। নানা পর্যায়ে সংস্কার ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বৈষম্য, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, মানহীন পাঠদান, শিক্ষক সংকট ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণের অভাব — সব মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এক ধরনের ভঙ্গুর কাঠামোতে পরিণত হয়েছে।

শিক্ষায় বৈষম্য ও সুযোগের অভাব

শহর ও গ্রামের শিক্ষার মানে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। উন্নতমানের স্কুল, অভিজ্ঞ শিক্ষক ও আধুনিক প্রযুক্তি সাধারণত শহরকেন্দ্রিক, যেখানে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে এখনও বিদ্যুৎ, বসার সঠিক ব্যবস্থা কিংবা পাঠ্যপুস্তকও পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও বেসরকারি ও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মানগত ফারাক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করছে।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মান

শিক্ষকেরা জাতি গঠনের কারিগর হলেও, আমাদের দেশে এই পেশায় যথাযথ সম্মান ও প্রশিক্ষণ প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে। নিয়োগে দুর্নীতি, নিয়মিত প্রশিক্ষণের অভাব ও অতিরিক্ত প্রশাসনিক চাপ অনেক শিক্ষককে নিরুৎসাহিত করে তোলে। ফলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পাঠ্যক্রম ও বাস্তবতা

বর্তমান পাঠ্যক্রম অনেকাংশেই মুখস্থনির্ভর, চিন্তাশীলতা ও সৃজনশীলতার চর্চা এখানে অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীরা নম্বর পাওয়ার দৌড়ে যুক্ত থাকলেও তারা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়ে। প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের এই যুগে শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করা — যা এখনো অনেকটাই অনুপস্থিত।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতি

শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বত্র রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির ছাপ স্পষ্ট। নিয়োগ, বদলি, পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রভাব পড়ে থাকে। এসব কারণে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও উন্নয়নমুখী পরিবেশ গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।

আমাদের করণীয়

১. শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি তা সঠিকভাবে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে।
২. গ্রামীণ শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. শিক্ষক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ও নিয়মিত করতে হবে।
৪. শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং ই-লার্নিংকে উৎসাহিত করতে হবে।
৫. শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬. একটি যুগোপযোগী ও দক্ষতাভিত্তিক পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।

উপসংহার

একটি জাতির উন্নয়ন নির্ভর করে তার শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। ভঙ্গুর কাঠামোকে সুসংহত করতে হলে একযোগে সরকার, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আজকের বিনিয়োগই হবে আগামীর ভিত্তি — এই উপলব্ধি থেকেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক, গ্রহণযোগ্য ও মানবিক করে তুলতে হবে।