০৩:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ইহুদিবাদ এবং গাজার ভবিষ্যৎ: সংঘাতের বৃত্ত থেকে মুক্তির খোঁজে

  • সম্পাদকীয়
  • প্রকাশের সময় : ০৭:১০:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
  • 45

সম্পাদকীয়

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কেন্দ্রে গাজা উপত্যকা একটি প্রতীকের মতো দাঁড়িয়ে আছে—দমন, প্রতিরোধ এবং মানবিক দুর্দশার প্রতিচ্ছবি হয়ে। এর মূলভিত্তি নিহিত রয়েছে ইহুদিবাদের রাজনৈতিক দর্শন ও আধুনিক রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্মলগ্ন থেকে শুরু হওয়া এক দীর্ঘ ইতিহাসে। এই ইতিহাস শুধু ভৌগোলিক সীমানা বা সামরিক ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি পরিচয়ের, অধিকারবোধের এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম।
ইহুদিবাদের রাজনৈতিক রূপ
ইহুদিবাদ (Zionism) মূলত একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা ১৯শ শতকে ইউরোপে জন্ম নেয়। এটি একটি জাতিগত-ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ইহুদি জনগণের জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে আসে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই আন্দোলন বাস্তব রূপ লাভ করে, কিন্তু তার পেছনে রেখে যায় বহু বিতর্ক, উৎখাত ও নিপীড়নের ইতিহাস। ফিলিস্তিনের মূল জনগোষ্ঠী যারা শত শত বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছিল, তারা এই রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ায় তাদের ভূমি, অধিকার এবং নিরাপত্তা হারায়।
ইহুদিবাদের বর্তমান রূপ অনেকাংশেই নিরাপত্তাবাদী ও জাতিগত কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের সরকার ও সেনাবাহিনী প্রায়শই ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা’ রক্ষার নামে গাজায় আগ্রাসন চালায়, যেখানে শিশু, নারীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বব্যাপী ইহুদিবাদের একটি সংকীর্ণ ও বিতর্কিত রূপ তৈরি করেছে, যা ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক এবং আধিপত্যবাদী।
গাজা: বন্দিশিবিরে পরিণত এক ভূখণ্ড
গাজা উপত্যকা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হলেও, তা একইসঙ্গে একটি উন্মুক্ত কারাগারের মতো। ইসরা  য়েল ও মিশরের অবরোধে প্রায় দুই দশক ধরে গাজাবাসীরা জীবনযাত্রার মৌলিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। খাদ্য, ওষুধ, বিদ্যুৎ, পানি—সবকিছুর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই পরিস্থিতি শুধু মানবিক সংকট নয়, এটি এক ধরনের কাঠামোগত নিপীড়ন, যেখানে একটি জনগোষ্ঠীকে পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।
হামাসের অস্তিত্ব এবং প্রতিরোধ ইসরায়েলের পক্ষে গাজায় আক্রমণের যুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও বাস্তবতা হলো—এই সহিংসতা উভয় পক্ষের জন্যই ধ্বংসাত্মক এবং দীর্ঘমেয়াদে শান্তির সম্ভাবনাকে আরও ক্ষীণ করে তোলে।
ভবিষ্যতের সন্ধানে
গাজার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সমাজের সদিচ্ছা, ফিলিস্তিনি জনগণের ঐক্য, এবং ইসরায়েলি সমাজের আত্মসমালোচনার উপর। একদিকে যেমন ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সমালোচনামূলক ইহুদিরা দিন দিন প্রশ্ন তুলছে রাষ্ট্রের দমননীতির বিরুদ্ধে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরেও রয়েছে গণতান্ত্রিক এবং অসামরিক প্রতিরোধের চেতনা।
সমাধান একমাত্র সম্ভব যদি ইহুদিবাদের নাম করে আধিপত্যবাদকে ত্যাগ করে ইসরায়েল এমন একটি রাষ্ট্র গঠনে আগ্রহী হয়, যেখানে ইহুদি ও ফিলিস্তিনি উভয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত হয়। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হোক বা একটি সম্মিলিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র—উভয় ক্ষেত্রেই দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আন্তর্জাতিক চাপ, এবং মানুষের মানবতা বোধ।
উপসংহার
গাজার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হোক—এটা নিয়তির লেখা নয়। এটি পরিবর্তন সম্ভব, যদি বিশ্ববাসী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সাহসিকতার সঙ্গে ইতিহাসের ভুলগুলো স্বীকার করে সামনে এগোতে চায়। ইহুদিবাদ যদি আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানবিক রূপে রূপান্তরিত হয়, এবং গাজাবাসী যদিy স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার পায়—তবে সংঘাত নয়, সহাবস্থানের নতুন ইতিহাস লেখা সম্ভব।

চুয়াডাঙ্গায় ইয়াবাসহ তিন মাদক কারবারি আটক

নাটোরে ভুট্টা ক্ষেত থেকে শিশু জুঁইয়ের মরদেহ উদ্ধার, তদন্তে পুলিশ

শার্শায় ধানক্ষেত থেকে দুটি পাইপগান উদ্ধার

বৈশাখের সন্ধ্যায় মিনিবাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে শিশু নিহত, বাসে আগুন

নিজেকে ছাত্রলীগ দাবির ৪ বছর পর হয়ে গেলেন ছাত্রদলের আহ্বায়ক

সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ওয়ার্ড সুবিধার দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

প্লট দুর্নীতি: হাসিনা, রেহানা, ববির সঙ্গে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপকে গ্রেপ্তারেও পরোয়ানা

মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনস্রোত

এশিয়ার ৩ দেশ সফর করবেন শি জিনপিং

নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ, ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত ৩

চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে হাসিনার দোসররা: ফারুকী

সিলেটে ‘গাড়ি পার্কিং’ নিয়ে সংঘর্ষ, ৩১ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

কুষ্টিয়ার আমলায় জুমার নামাজ শেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে দোয়া ও প্রতিবাদ মিছিল

সম্পাদকীয়

চলতি বছর বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে এনডিবি

ইহুদিবাদ এবং গাজার ভবিষ্যৎ: সংঘাতের বৃত্ত থেকে মুক্তির খোঁজে

সারা দেশে দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৪৯ জন গ্রেপ্তার

চেকপোস্ট ব্যারাক থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ইহুদিবাদ এবং গাজার ভবিষ্যৎ: সংঘাতের বৃত্ত থেকে মুক্তির খোঁজে

প্রকাশের সময় : ০৭:১০:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কেন্দ্রে গাজা উপত্যকা একটি প্রতীকের মতো দাঁড়িয়ে আছে—দমন, প্রতিরোধ এবং মানবিক দুর্দশার প্রতিচ্ছবি হয়ে। এর মূলভিত্তি নিহিত রয়েছে ইহুদিবাদের রাজনৈতিক দর্শন ও আধুনিক রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্মলগ্ন থেকে শুরু হওয়া এক দীর্ঘ ইতিহাসে। এই ইতিহাস শুধু ভৌগোলিক সীমানা বা সামরিক ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি পরিচয়ের, অধিকারবোধের এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম।
ইহুদিবাদের রাজনৈতিক রূপ
ইহুদিবাদ (Zionism) মূলত একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা ১৯শ শতকে ইউরোপে জন্ম নেয়। এটি একটি জাতিগত-ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ইহুদি জনগণের জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে আসে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই আন্দোলন বাস্তব রূপ লাভ করে, কিন্তু তার পেছনে রেখে যায় বহু বিতর্ক, উৎখাত ও নিপীড়নের ইতিহাস। ফিলিস্তিনের মূল জনগোষ্ঠী যারা শত শত বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছিল, তারা এই রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ায় তাদের ভূমি, অধিকার এবং নিরাপত্তা হারায়।
ইহুদিবাদের বর্তমান রূপ অনেকাংশেই নিরাপত্তাবাদী ও জাতিগত কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের সরকার ও সেনাবাহিনী প্রায়শই ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা’ রক্ষার নামে গাজায় আগ্রাসন চালায়, যেখানে শিশু, নারীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বব্যাপী ইহুদিবাদের একটি সংকীর্ণ ও বিতর্কিত রূপ তৈরি করেছে, যা ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক এবং আধিপত্যবাদী।
গাজা: বন্দিশিবিরে পরিণত এক ভূখণ্ড
গাজা উপত্যকা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হলেও, তা একইসঙ্গে একটি উন্মুক্ত কারাগারের মতো। ইসরা  য়েল ও মিশরের অবরোধে প্রায় দুই দশক ধরে গাজাবাসীরা জীবনযাত্রার মৌলিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। খাদ্য, ওষুধ, বিদ্যুৎ, পানি—সবকিছুর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই পরিস্থিতি শুধু মানবিক সংকট নয়, এটি এক ধরনের কাঠামোগত নিপীড়ন, যেখানে একটি জনগোষ্ঠীকে পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।
হামাসের অস্তিত্ব এবং প্রতিরোধ ইসরায়েলের পক্ষে গাজায় আক্রমণের যুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও বাস্তবতা হলো—এই সহিংসতা উভয় পক্ষের জন্যই ধ্বংসাত্মক এবং দীর্ঘমেয়াদে শান্তির সম্ভাবনাকে আরও ক্ষীণ করে তোলে।
ভবিষ্যতের সন্ধানে
গাজার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সমাজের সদিচ্ছা, ফিলিস্তিনি জনগণের ঐক্য, এবং ইসরায়েলি সমাজের আত্মসমালোচনার উপর। একদিকে যেমন ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সমালোচনামূলক ইহুদিরা দিন দিন প্রশ্ন তুলছে রাষ্ট্রের দমননীতির বিরুদ্ধে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরেও রয়েছে গণতান্ত্রিক এবং অসামরিক প্রতিরোধের চেতনা।
সমাধান একমাত্র সম্ভব যদি ইহুদিবাদের নাম করে আধিপত্যবাদকে ত্যাগ করে ইসরায়েল এমন একটি রাষ্ট্র গঠনে আগ্রহী হয়, যেখানে ইহুদি ও ফিলিস্তিনি উভয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত হয়। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হোক বা একটি সম্মিলিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র—উভয় ক্ষেত্রেই দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আন্তর্জাতিক চাপ, এবং মানুষের মানবতা বোধ।
উপসংহার
গাজার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হোক—এটা নিয়তির লেখা নয়। এটি পরিবর্তন সম্ভব, যদি বিশ্ববাসী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সাহসিকতার সঙ্গে ইতিহাসের ভুলগুলো স্বীকার করে সামনে এগোতে চায়। ইহুদিবাদ যদি আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানবিক রূপে রূপান্তরিত হয়, এবং গাজাবাসী যদিy স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার পায়—তবে সংঘাত নয়, সহাবস্থানের নতুন ইতিহাস লেখা সম্ভব।